
মো: আল হোসাইন
ই-কমার্স ভিত্তিক মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি যা অতি অল্প সময়ে মানুষের দৃষ্টি কাটতে সক্ষম হয়। তাদের মূল টার্গেট ছিল ডিসকাউন্ট বা বিভিন্ন অফার দিয়ে গ্রাহক তৈরী করা। এই অফারের কারনে কিছু শ্রেনী পেশার লোকজন তাদের অধিক আয়ের প্লাটফর্ম হিসেবে ইভ্যালিকে বেছে নেয়। ইভ্যালি এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ে ৪৫ লাখ গ্রাহক তৈরী করতে সক্ষম হয়।
পণ্যের অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট বা অফারের কারনে ইভ্যালীর কোন প্রফিট অর্জনের সুযোগ না থাকলেও দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা এবং দ্বায়ের পরিমান বাড়তে থাকে। ইভ্যালী ব্যবসার প্রকল নিয়মকানুনকে অপেক্ষা করে শুধুমাত্র নতুন গ্রাহক সৃষ্টির লক্ষে বিপজ্জনক পলিসি গ্রহন করে থাকে। ই-কমার্সে ক্যাশ অন ডেলিভারি (COD) এ পদ্ধতিতে পরিশোধের সুযোগ থাকলেও ইভ্যালিতে এমন পদ্ধতির কথা মনে হয় অজানা।
ইভ্যালি শুরু থেকেই ভুল ব্যবসায়িক পদ্ধতির অনুসরন করে ব্যবসা করলেও কিছু মানুষ অল্প সময়ে অধিক আয়ের স্বপ্ন দেখে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে, তারা দেখছে ইভ্যালি দেরিতে হলেও পন্য ডেরিভারী করে, ডেলিভারী না করতে পারলে পণ্যের সমমূল্য পরিশোধ করে ,এই ফাঁদে পরে তারা অধিক টাকা বিনিয়োগ করতে থাকে। ইভ্যালীর মূল টার্গেট ছিল নতুন গ্রাকদের কাছে দ্বায় চাপিয়ে পুরাতন গ্রাহকদের কিছু কিছু পণ্য ডেলিভারী দিতে যাতে করে গ্রাহকদের মাঝে ইভ্যালির ব্যাপারে কোন নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম না দেয়।
ইভ্যালিতে মূলত অনেকগুলো কারনে মানুষ বিনিয়োগ করেছে প্রথমত বিশাল বিশাল অফার আর দ্বিতীয়ত ই-ভ্যালিকে বিশ্বস্ত ই-কমার্স হিসেবে বেছে নিয়েছে কারন এখানে অনেক সেলিব্রেটিরা ইভ্যালীর সাথে কাজ করেছে। ইভ্যালীর ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ও অভিনেতা তাহসান এছাড়াও অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ ই-ভ্যালীর সাথে কাজ করতে দেখেছে যার কারনে বিনিয়োগকারীরা ই-ভ্যালীকে আলিবাবা এবং আমাজন ভাবতে শুরু করেছে। একটি বিষয় ইভ্যালী সিইও রাসেল পরিস্কার জানতেন ইভ্যালীর যে দেনা সেটা ব্যবসার প্রফিট থেকে মিটানো সম্ভব না কারন ইভ্যালীর ব্যবসার শুরু থেকে কোন আয়ের অংশ নেই শুধু মাত্র দিন দিন দেনা বেড়েছে। তাই গ্রাহকের উপর দ্বায় চাপিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে দেউলিয়া ঘোষনা করতে পরিকল্পনা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত সকার কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলকে উক্ত অপরাধের দায়ে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের কারনে তাদের সকল পরিকল্পনা বেস্তে যায়।
ইভ্যালীর সম্পদ ও দায়
সম্প্রতি ইভ্যালি ওপর পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৭ জুন (বৃহস্পতিবার) প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইভ্যালি চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নিয়ে কোনো পণ্য সরবরাহ করেনি। অন্যদিকে তারা যেসব কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কেনে, তাদের কাছে ইভ্যালির বকেয়া ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ইভ্যালির চলতি সম্পদ দিয়ে গ্রাহক ও পাওনাদারদের বকেয়া অর্থের মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব। বাকি প্রায় ৮৪ শতাংশ বা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সমপরিমাণ দায় অপরিশোধিত থেকে যাবে। ইভ্যালির চলতি সম্পদের স্থিতি দিয়ে শুধু গ্রাহক দায়ের এক-তৃতীয়াংশেরও কম পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলকে গ্রেফতার করেছে সরকার এখন ইভ্যালীতে বিনিয়োগকারী গ্রাহকরা কি টাকা ফেরৎ পারেন? ইভ্যালীর এই অবস্থার জন্য কে দায়ী সরকার না বিনিয়োগকারীরা। কারন যেতহেতু সরকার ইভ্যালিকে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমোদন দিয়েছে সে ক্ষেত্রে দ্বায়ভারটা কি সরকারক নিবে। যদি কেউ দ্বায়ভারে না নেয় তাহলে ইভ্যালিতে বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে।
ইভ্যালিতে তিন ধরনের গ্রাহক নির্ণয় করা যেহে পারে এক. পুরাতন গ্রাহক যারা অনেক দিন যাবৎ ইভ্যালির সাইক্লোন সহ বিভিন্ন ধরনের অফার গ্রহণ করে লাভবান হয়েছেন। দুই. নিষ্ক্রীয় গ্রাহক যারা সুযোগ পেলে ছোটখাটো কোন অফার গ্রহণ করে থাকে তাদের বিনিয়োগের পরিমান কম এবং লাভ ক্ষতির পরিমান কম। তিন. নতুন গ্রাহক যারা অনেক বেশি বিনিয়োগ করে পণ্য ডেলিভারি পেয়েছে কম বা তাদের বিনিয়োগের বিরাট একটা অংশ ইভ্যালিতে তারা এখন সবচেয়ে ক্ষতির মধ্যে আছে।
ইভ্যালীর গ্রাহকের বড় একটা অংশ ছাত্র, বেকার,ক্ষুদ্র ব্যবসা তাদের অল্প অল্প টাকা বিনিয়োগ করে আজকে বিশাল পরিমান দাড়িয়েছে।কোন পলিসিতে এখন গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরৎ পাবে। ইভ্যালীর বিনিয়োগকারীরা যদি তাদের বিনিয়োগের টাকা ফেরৎ না পাই তাহলে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করা ছাড়া উপায় থাকবেনা। ইভ্যালির বর্তমান অবস্থার কারনে বিনিয়োগকারীরা তাদের পণ্য বা টাকা না পেয়ে পারিবারিক অনেক কলহের সৃষ্টি শুরু হয়েছে তাদের জীবনে নেমে এসেছে হতাশা। তাই সরকারের দ্বায়িত্বশীলদের উচিত হবে রাসেলের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রয়োজনে শর্তসাপেক্ষ জামিন দিয়ে গ্রাহকের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা।
শুরুতেই ইভ্যালির ব্যবসার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই আজকে বিশাল গ্রাহক প্রতারনার সুযোগ সৃষ্টি হত না।
তাই সরকারের দায়িত্বশীলদের উচিত হবে ইভ্যালির পলিসি গ্রহণ করে যারা বিভিন্ন নামে বেনামে ই-কমার্স খুলে মানুষের সাথে প্রতারনা শুরু করেছে তাদেরকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের গ্রাহক প্রতারণার প্লাটফর্ম তৈরী হবে।
সেলিব্রেটিদের আরও সতর্ক হয়ে সব কিছু জেনেশুনে যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে জনসাধারন প্রতারনার হাত থেকে হয়তোবা বেছে যেতে পারে । কারন আমাদের দেশে সেলিব্রেটিদের কে মানুষ সম্মান করে ভালোবাসে বিশ্বাস করে তাদের সে সম্মানটুকু ধরে রাখা আপনাদের কর্তব্য আপনাদের পথ চলা দেখে মানুষ অনুপ্রানীত হয়ে যে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতে আগ্রহবোধ করে।
গ্রাহকদের উচিত আরও সর্তক হয়ে নিজের পরিশ্রমের টাকা সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করা। জীবনে পরিশ্রমের বিনিময়ে সফতা অর্জন করতে হয় পরিশ্রম না করে অল্প সময়ে অধিক আয়ের স্বপ্ন দেখা বোকমি তাহলেই কেবল প্রতারনার সুযোগ তৈরী হয়। তাই ইভ্যালি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তা করার সময় এসছে।